Wednesday, January 11, 2012

ভারতীয় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র

প্রথমে মালদার কথাই ধরা যাক৷ প্রথমে গনি খান চৌধূরি, তারপর বোন বিধায়িকা রুবি নুর, ভাই আবু হাসেম সাংসদ, ভাগ্নী মৌসম সাংসদ৷ এবার আবার আবু হাসেম বিধানসভায প্রার্থী করেছেন ভাই নাসির আর ছেলে ইশাকে৷ মুর্শিদাবাদের সাংসদ মান্নান হোসেনের ছেলে সৌমিক ডোমকলের প্রার্থী, প্রার্থী প্রণবপুত্র অভিজি বা তৃণমূলের শিশিরপুত্র দিব্যেন্দু, অন্য ছেলে শুভেন্দুও সাংসদ৷
সেদিন কলকাতার এক প্রশস্থ রাস্তার মাঝখানে একটি পোস্টার চোখে পড়ল৷ তাকিয়ে দেখলাম একটি পরিচিত হাসি হাসি মুখ৷ নাম তাঁর রাহুল গান্ধী৷ এতে খুব বেশী বিচলিত হলাম না৷ কেননা সামনেই রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন৷ রাহুল গান্ধীর ছবি লাগিয়ে কেউ ক্যাম্পেন করতেই পারে৷ কিন্তু যে জিনিসটি আমাকে প্রচন্ড ভাবালো তা হল ছবির সাথে দেওয়া ক্যাপশনটি৷ বড় বড় করে লেখা ‘‘ভারতের ভবিষ্য যে ব্যক্তি মাত্র কয়েক বছর আগে (২০০৩ সাল থেকে) রাজনীতিতে নামলেন এবং যাঁকে রাজনীতির ব্যাপারে এখনও অপরিপক্ক ভাবা হয় তিনি কিনা ১২০ কোটি ভারতবাসীর ভবিষ্য! ক্যাপশন কিসের ইঈিত বহন করে? তাঁর মধ্যে কি এমন বিশেষত্ব আছে যার কারণে তাঁকে এত বড় করে দেখা হচ্ছে? এর কারণ কি এটা যে, তিনি এক রাজ বংশের রাজপুত্র? তাঁর পিতা রাজীব গান্ধী ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, মা সোনিয়া গান্ধী বর্তমান কংগ্রেস সভানেত্রী, ঠাকমা ইন্দিরা গান্ধী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রপিতামহ জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী?
পরে ভেবে দেখলাম যে, রাহুল গান্ধী একা নয়৷ রাজনীতির ময়দানে বংশানুক্রমিক ভাবে আসা ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক৷ বর্তমান লোকসভার এম.পি দের দিকে দৃষ্টিপাত করলাম৷ দেখা গেল যে, ত্রিশ বছরের বয়সের মধ্যে এম.পি. হয়েছেন এমন সকলেই বংশানুক্রমিক সূত্র থেকে অর্থা তাঁদের পিতা বা অন্য কোনো ঘনিষ্ট আত্মীয় একজন প্রতিষ্টিত রাজনীতিবিদ৷ আর চল্লিশ বছর বয়সের মধ্যে এম.পি হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের ২/৩ অংশ বংশানুক্রমিক সূত্র ধরে৷ বর্তমান সর্বমোট ৫৪৫ জন এম.পির মধ্যে ১৫৬ জন বংশানুক্রমিক ভাবে আসা৷ শতকরা হিসাবে দেখলে এনাদের সংখ্যা হয় ২৮.% যা খুবই উদ্বেগজনক৷
বংশানুক্রমিক ভাবে আসা এম.পি.দের বৈশিষ্ট সবার ক্ষেত্রে প্রায় একই৷ এঁরা কোনো ভারতীয় বোডিং স্কুলে পড়াশুনা করে সোজা চলে যান ইউরোপ কিংবা আমেরিকায়৷ সেখানকার কোনো কলেজ বা ইনস্টিটিউট থেকে ব্যাংকিং অথবা বাণিজ্য বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে নিরাপদে ফিরে আসেন ভারতে৷ ততদিনে তাঁদের রাজনীতিতে নামার পথ প্রশস্থ হয়ে থাকে৷ আর তারা বিলম্ব না করে নিজেদেরকে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত করে থাকেন৷ রাহুল গান্ধীর উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে৷ তিনি প্রথমে দিল্লীতে অবস্থিত সেন্ট কলম্বিয়াস স্কুলে পড়াশুনা করেন৷ তারপর দেরাদুনের দুন স্কুলে ভর্তি হয়৷ বলা বাহুল্য যে, এসব স্কুলে শুধুমাত্র মন্ত্রী, এম.পি. অন্যান্য বড় সড় ব্যক্তিদের ছেলেরাই পড়াশুনা করে৷ এখান থেকে পড়াশুনা করার পর সোজা চলে যান আমেরিকার ফ্লোরিডায়৷ সেখানকার রলিন্স কলেজ থেকে বি. সমাপ্ত করে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ থেকে এম.ফিল ডিগ্রি হাসিল করেন৷ তারপর দেশে ফিরে মুম্বাই-এর একটি কনসালটেন্সি কোম্পানির উচ্চপদে সার্ভিস করতে থাকে৷ ২০০৩ সাল থেকে রাহুল গান্ধীকে রাজনীতির ময়দানে নামতে দেখা যায়৷ রাজনীতিতে প্রবেশ করার ব্যাপারে তাঁর একটি মন্তব্য খুবই উল্লেখযোগ্য৷ মধ্য প্রদেশের একটি অন্তরঙ্গ ছাত্র সমাবেশে তিনি বলেন-‘‘রাজনীতিতে প্রবেশ করার তিন চারটি উপায় আছে৷ প্রথমতযদি কারও অর্থ ক্ষমতা থাকে৷ দ্বিতীয়তপারিবারিক সূত্র থেকে৷ আমি নিজেই এর দৃষ্টান্ত৷ তৃতীয়ত-যদি কেউ কোনো রাজনীতিবিদের ঘনিষ্ঠ পরিচিত হন৷ আর চতুর্থতজনগনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে৷পারিবারিক সূত্র থেকে আসা অন্যান্য এম.পি.-দের মতো রাহুল গান্ধী অন্তত মিথ্যা বলেননি৷ তার বক্তব্য – ‘‘যে আপনে পিতা, নানী, আউর পরদাদা কে বিনা উস জাগাহ পার নেহি পৌঁছ সাকতা থা যাঁহা সে আজ হুঁ৷অর্থা-‘‘আমার পিতা, ঠাকুমা প্রপিতামহ ছাড়া আমি জায়গাতে পৌঁছাতে পারতাম না যেখানে আমি আছি৷
পারিবারিক সূত্র থেকে আসা এই সমস্ত এম.পি.-রা অল্প বয়সে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই রাজনীতিতে প্রবেশ করে নির্বচিত হন৷ তাই তাঁদের আচার ব্যবহার ও কথা বার্তায় অনভিজ্ঞতা ও অযোগ্যতার ছাপ প্রায়ই প্রকট হয়ে থাকে৷ তা সত্ত্বেও তাঁদের ক্রেডিট কোন ভাবে কম হয় না, কেননা তাঁরা সকলেই বড় বড় ব্যক্তিদের তথা প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের ছেলে৷ আশেপাশের সবাই তাঁদেরকে রাজপুত্রের মতো স্নেহ, ভালবাসা ও সম্মান করেন৷ কোন ভূল করলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন৷ বলে থাকেন যে-এই তো সবেমাত্র রাজনীতিতে প্রবেশ করেছেন৷ ভূল তো হবেই, এঁরাই তো দেশের ভবিষ্য, জাতির ভরসা এবং নতুন প্রজন্ম৷
এঁদের প্রতি মিডিয়ারও বক্তব্য খুবই পজিটিভ৷ মিডিয়া বিষয়টিকে এভাবে উপস্থাপন করে যে- জাতির ভবিষ্য নির্মাণে যুবকরা এগিয়ে এসেছে৷ এঁদেরকে মিডিয়াতেতরুণ তুর্কীহিসাবে প্রতিভাত করা হয়৷ মিডিয়ার বক্তব্যে এটা উঠে আসে যে-‘‘ যুগ হল রাহুল গান্ধীর যেখানে যুব সম্প্রদায়কেই রাজনীতির মানদন্ড হতে হবে৷ যদি এমন কোন সময় থেকে থাকে যখন যুবকরাই পরিবর্তন আনতে পারে তা হল বর্তমান সময়৷ তাদের সময় এসে গেছে৷এই যুব দলকেটিম রাহুল” (Team Rahul) হিসাবে উল্লেখ করা হয় জনপ্রিয় মিডিয়া গুলিতে৷
ইতিহাসের পাতায় পড়েছি রাজা মহারাজাদের প্রতি প্রজারা ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছাই হোক চরম ভক্তি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করত৷ রাহুল গান্ধী সোনিয়া গান্ধীর ক্ষেত্রেও সেরকম চিত্র চোখে পড়ে৷ কংগ্রেসের মুখপত্রকংগ্রেস সন্দেশএর বিভিন্ন সংখ্যাতে নেহেরু গান্ধী রাজবংশের চরম প্রশংসা প্রায়শই লক্ষনীয়৷ ইন্দিরা গান্ধীর ৯১তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত তাঁর ছবির পাশে ছিল ফুলের মালা পরিহিতা মহারানী সোনিয়া গান্ধীর ছবি৷ সেই সাথে নিম্নোক্ত ক্যাপসন-
“Our pride is Mother India.
 Our guide is Mother Sonia.”
অর্থাদেশমাতৃকা-স্বরূপ ভারতবর্ষ আমাদের গর্ব আর মাতা সোনিয়া আমাদের পথ প্রদর্শক৷প্রাক্তন স্পিকারের কন্যা সব থেকে কম বয়স্কা মন্ত্রী আগাথা সাঙ্গমার এক বক্তব্যে সোনিয়া রাহুলের প্রতি অতিভক্তির পরিচয় পাওয়া যায়৷ তিনি বলেন যে – “শপথ গ্রহণের পর সোনিয়াজি রাহুলজি আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷আরও বলেন যে -“গত এক বছরে আমার পারফর্মেন্সে রাহুল গান্ধী খুবই আনন্দিত৷এসব বক্তব্যে বোঝা যায় যে, গান্ধী পরিবার খুশী হওয়াই বড় কথা, জনগন কি মনে করল তা প্রাথমিক নয়৷ ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার জন্য যারা রাহুল গান্ধীকে সন্তুষ্ট চায় তাদের প্রতি তাঁর বিরক্তি সূচক মন মানসিকতা থাকলেও সে যে এমনটা একেবারেই চায়না তা বলা যায় না৷ একবার জনৈক মন্ত্রীকেও রাহুলের জুতো বয়ে নিয়ে যেতে দেখা গেছে৷
সমস্ত এম.পি দের মধ্যে ২৮.% পারিবারিক সূত্রে হলেও মহিলাদের ক্ষেত্রে এ হার আরও অনেক বেশী (৬৯.%) অর্থা প্রতি ১০ জন মন্ত্রীর মধ্যে ৩ জন পারিবারিক সূত্রের এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৭ জন পারিবারিক সূত্রের৷ ২০১০ সালে ১০৮ তম সাংবিধানিক সংযোজনে বলা হয়েছে যে রাজ্য ও দেশীয় পর্যায়ে সমস্ত নির্বাচিত জায়গাতে স্ত্রীলোকদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে৷ এর ফলে পারিবারিক সূত্রে মহিলা এম.পি দের সংখ্যা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
এখন প্রশ্ন হল শুধু কি কংগ্রেস পার্টির মধ্যেই পরিবারতন্ত্র রয়েছে ? নিশ্চয় নয়, তবে কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এ হার সর্বোচ্চ৷ ৩৫ বসরের কম এমন সমস্ত কংগ্রেস এম.পি.’ই বংশানুক্রমিক ভাবে বা পারিবারিক সূত্রে৷ ৪০ বসরের কম এমন ১০ জন কংগ্রেস এম.পি.র মধ্যে প্রায় ৯ জনই (৮৮%) পারিবারিক সূত্রে৷ অন্যান্য দলগুলির মধ্যে সি.পি.আই.এমের ২৫%, বিজেপির ১৯%, তৃণমূল কংগ্রেসের ১৫.% এবং শিবসেনার ৯.% এম.পি পারিবারিক সূত্র থেকে আসা৷ আঞ্চলিক ও ছোট ছোট দলগুলির ক্ষেত্রে এর হার অত্যন্ত বেশী৷
যেমন-রাষ্ট্রীয় লোক দলের ৫ জন এম.পির মধ্যে ৫ জনই পরিবারিক সূত্রের (১০০%) আবার ন্যাশনালিষ্ট কংগ্রেস পার্টির ক্ষেত্রে জন এম.পি.র মধ্যে জন পারিবারিক সূত্রের (৭৭.%) এ ধরনের এম.পি.দের মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল৷ বিশেষ করে যদি পরিবারের একাধিক জনের পার্টির সাথে বা পার্টির উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকে তাহলে মন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আরও তিন গুণ৷
এ ধরনের ব্যবস্থায় জাতির ভবিষ্য গঠন হবে নাকি ভবিষ্য অন্ধকার হবে তা আশা করি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছেন৷ বড় বড় বাড়ীর ছেলেরা যাঁরা ছোটবেলা থেকেই সমাজ থেকে বিচ্যুত, নিরাপত্তার জন্য যাদেরকে নির্দিষ্ট কয়েকটি বোর্ডিং স্কুলেই পড়াশুনা করতে পাঠানো হয় এবং সেখান থেকে তাঁরা সোজা চলে যান ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য তাঁরাতো ভারতীয় সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানলাভতো দূরের কথা, ভারতীয় সমাজের স্পর্শওতো কখনও অনুভব করার সুযোগ পান না৷ এই সমস্ত ব্যক্তিরা যাদের সাথে মেশার সুযোগ সামান্য হলেও পায় তাঁরাও সমাজের উপরতলার মানুষ৷ এঁরা বিদেশ থেকে ফিরে ক্রমেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব হাতে পেয়ে দেশের বা সমাজের কল্যানে কাজ করতে পারবে এমন ধারনা কিভাবে করা যায়? এঁরা না নিজের পাড়া-প্রতিবেশীর খবর রাখেন না তাঁরা দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক অবহিত৷ এঁদেরকে যেভাবে বোঝানো হয় এঁরা সেরকমভাবেই বুঝে নেয় ভাসা ভাসা, উপর উপর৷ ফলে এদেরকে দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা রাজনৈতিক দলগুলির জন্য খুবই সহজ হয়৷
জনগনের সাথে এঁদের সম্পর্ক কোন অবস্থাতেই নিবিঢ় হয় না৷ জনগন তাঁদের ব্যাপারে খুবই আশাবাদী হয়৷ এই আশাকে সম্পূর্ন নিরাশায় পরিণত না করার ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের রাজনীতিবিদেরা তপর থাকেন এবং সুচারুভাবে জনগনকে শান্ত/ক্ষান্ত রাখেন৷ জন প্রতিনিধিত্ব করার পরিবর্তে নিজের গদি টিকিয়ে রাখার দিকেই এরা বেশী মনোযোগী হন৷ তাই যে যে দলের অন্তর্ভূক্ত হন, তিনি সেই দলের উর্দ্ধতন নেতা বা নেত্রীকে সন্তুষ্ট করার প্রতি অত্যন্ত খেয়াল রাখেন৷
প্রকৃতপক্ষেই যাঁদের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা আছে তাঁদেরকে বঞ্চিত করা হয়৷ ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের কল্যান না হয়ে রাজনৈতিক দলেরই কল্যান হয় এই জঘন্য প্রথার মধ্যে দিয়ে৷ তাই তো দেখা যায় নিজের দলের সুনাম বজায় রাখার জন্য এঁরা মরিয়া হয়ে ওঠেন৷ জনগনের জন্য ছোট কোনো কাজ করলে বিরাট পাবলিসিটি দিতে কখনও ভূল করে না৷ তাই এ ধরনের ব্যবস্থায় প্রকৃত ঞধষবহঃ ঢ়ড়ড়ষ কখনও উঠে আসে না৷ এঁদের কারও কারও মধ্যে জনকল্যাণমূলক মানসিকতা প্রাথমিক পর্যায়ে লক্ষ্য করা গেলেও ধীরে ধীরে তাঁরা পরিপক্ক রাজনীতিবিদদের মতো ধূর্ত হয়ে ওঠেন৷ নিজেদের আখের গোছানোর ব্যাপারে এদের ভালোই মনোযোগ থাকে৷ এদের মধ্যে অনেকেরই সুইস ব্যাঙ্কে একাউন্ট আছে৷ বিতর্কিত হলেও বলে রাখতে চাই রাহুল গান্ধী ও তার পরিবারের সুইস ব্যাঙ্ক একাউন্টে ৪০ থেকে ৮০হাজার কোটি টাকা আছে বলে রিপোর্ট পাওয়া গেছে৷
পরিবারতন্ত্রের মধ্য দিয়ে অর্থা পারিবারিক সূত্র ধরে রাজনীতিতে আসা একবিংশ শতকের নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ এটা বহুদিন ধরে চলে আসা একটি প্রথা-একটি রোগ যা খুবই ভয়ঙ্কর৷ রাজতন্ত্রে রাজার ছেলেই রাজা হয়-আর এখানেও মন্ত্রীর ছেলে মন্ত্রী,এম.পির ছেলে এম.পি হচ্ছে৷ ইতিহাসের পাতায় আমরা পাল বংশ, সেন বংশ, মৌর্য বংশ প্রভৃতির কথা জানি৷ একই ভাবে বর্তমান কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রকে নেহেরু বংশ বললে কোথায় ভূল হবে? আর যে ভারতবর্ষ গণতন্ত্রের জন্য গর্ব করে সেই গণতন্ত্রই বা গেল কোথায়? ভারতীয় পরিস্থিতি এমনই যেখানে এখনও ভালবাসা, ভক্তি, শ্রদ্ধা পক্ষপাতিত্বের ভিত্তিতে নির্বাচন হয়ে থাকে৷ এ এমন এক রোগ যা অদূর ভবিষ্যতে নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে কেউই ধারনা করতে পারে না৷ এ রোগের জীবানু রাজনৈতিক দলগুলির রক্তের সাথে মিশে আছে বললে অত্যুক্তি হয় না৷
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে বিলম্ব না করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার৷ সমাজ সম্পর্কে স্বচ্ছ ও ভারসাম্যপূর্ণ চিন্তার প্রসার ঘটাতে হবে৷ নিজের স্বার্থের উর্দ্ধে জনস্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে৷ এ ধরনের যত ভালো ভালো কথাই আমরা বলি না কেন তাতে কোনো ভাবেই কাক্সিক্ষত এক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্জন করা সম্ভব নয়৷ কেননা যারা অর্থ, প্রভাব, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতার বলে মিডিয়াকে হাতে রাখতে পারে, প্রশাসনকে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করতে পারে তাঁদেরকে নিজেদের স্বার্থচিন্তা থেকে বিরত রাখার মত কি এমন জিনিস আছে? তাঁদের মধ্যে জবাবদিহীর চেতনা সৃষ্টি করার কি উপায় আছে? ক্ষমতার দাপাদাপি থেকে বিরত রাখার কোন যুক্তি তাঁদেরকে দেওয়া যায় ? তাঁরাতো এর মধ্যেই শান্তি খুঁজে পান৷ জনগনের টাকা আত্মসা করাকে পাপ মনে করার কি যুক্তি আছে এঁদের কাছে? আসলে এঁদের কাছে এমন কোনো বিশ্বাস, মতাদর্শ বা জীবনদর্শন নেই যা তাদেরকে উন্নত নৈতিক মানদন্ডের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে৷

সমাপ্ত

[প্রবন্ধটি উন্মেষ, বর্ষ ১, সংখ্যা ১ এ প্রকাশিত]

No comments:

Post a Comment