প্রিয় ছাত্রবন্ধুরা! সালাম নিও৷ আর কয়েকদিন পরেই তোমাদের পরীক্ষা৷ আশা করি ভালোই প্রস্তুতি নিয়েছো৷ তোমাদের পরীক্ষা যাতে ভালো হয় সেটাই এখন সবার চিন্তা৷ তাই এখানে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল৷ এগুলি ফলো করতে পারলে আশা করি তোমরা ফল পাবে৷
(১) প্রস্তুতি পর্ব তো প্রায় শেষ৷ আমরা এখানে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিয়ে কিছু আলোচনা করব না৷ আশা করি আমাদেরই প্রকাশিত ‘পরীক্ষা প্রস্তুতি ও টিপস'নামক পুস্তিকাটি পড়ে তোমরা উপকৃত হয়েছো৷ যাইহোক,এপর্বে তোমাদের চিন্তাভাবনা এরকম হওয়া উচিত - গত কয়েক বছর ধরে এবং বিশেষত গত কয়েক মাসে তোমরা যে বিপুল পড়াশুনা করেছো তা যেন পরীক্ষার খাতায় যথাযথ ভাবে নামাতে পারো৷ এই অবস্থায় নতুন নতুন বিষয় বা বিষয়বস্তু নিয়ে পড়াশুনার দিকে ঝোঁক না দিয়ে যা পড়েছো সেগুলিই রিভাইজ দিয়ে ঠিক ঠাক করে নিলেই ভালো করবে৷
(২) যদি সম্ভব হয় তাহলে টেস্ট পেপার বা প্রশ্ন বিচিত্রা থেকে কোন একটি পেপার বেছে নিয়ে প্রতিটি বিষয়েই একটি করে ডেমো টেস্ট দিয়ে দাও৷ ঘড়ি ধরে একেবারে পরীক্ষার মত করে৷ কাউকে দিয়ে গার্ড দেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ নিজেই নিজের গার্ড৷ তারপর নিজেই নিজের খাতা দেখো৷ দেখো ভুলগুলো কোন যায়গায় হচ্ছে৷ আর কোন 'সিলি মিসটেক'(silly mistake) হচ্ছে কিনা৷ ঠিক সময়ে শেষ করতে পারছ কিনা৷ এতে ভীষনভাবে উপকৃত হবে ইনশাল্লাহ৷ এটা অনেকটা ফাইনাল ম্যাচ খেলার আগে একটা টেস্ট ম্যাচ খেলে নেওয়ার মত৷
(৩) পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে গেলে বিশ্রাম নিতে ভুলো না৷ পড়ার চেয়ার থেকে উঠে আব্বু-আম্মুর সাথে একটু কথা বলে এসো৷ বাড়ীর ছোট ছেলে মেয়েদের সাথেও একটু সময় কাটিয়ে আসতে পারো৷ কিংবা বাড়ী সংলগ্ন ফুল বাগানে একটু জল দিয়ে এসো৷ আসলে ক্লান্ত অবস্থায় পড়াশুনা করলে কোন লাভ হয় না৷
(৪) খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করবে৷ এমন কিছু খাবে না যাতে পেট খারাপ হতে পারে৷ খাওয়ার পরিমানের ব্যাপারেও সচেতন থেকো৷ টেনশন করে খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেওয়ার কোন মানে হয় না৷ আবার পেটভর্তি করে খাওয়াও একেবারে চলবে না৷ পরিমাণ মত খাওয়া দাওয়া করবে৷ পানি বেশী করে খাবে৷ শরীরে পানির অভাব হলে শরীর ও মন ঝিমিয়ে পড়ে৷ পড়াশুনায় এর প্রভাব পড়ে৷
(৫) টাইম টেবিল নিশ্চয়ই এতদিনে বানিয়ে নিয়েছো৷ যদি না বানিয়ে থাকো তাহলে অবশ্যই বানিয়ে নাও৷ তাতে কত তারিখের মধ্যে কোন কোন বিষয় রিভাইজ দেবে তা অন্তর্ভুক্ত কর৷ ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠা থেকে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত একটা সময় সূচী তৈরী করে নিলে ভালো৷ এটি মোটামুটি ফলো করলেই হবে৷ খুব কঠোরতার (rigidity) সাথে পালন না করলেও চলবে৷ আর রুটিন ব্রেক হলেও মন খারাপ বা হতাশ হলে চলবে না, কেমন!
(৬) পিতামাতারও বেশ কিছু করণীয় আছে৷ আপনারা কোনভাবেই অসন্তুষ্ট হয়ে কিংবা রাগন্বিত হয়ে ছেলেকে বা মেয়েকে কিছু বলে বসবেন না৷ নিজের ছেলে বা মেয়েকে নিয়ে হয়ত আপনাদের অনেক স্বপ্ন আছে৷ কিন্তু সে পড়াশুনা ঠিকমত করছে না দেখে রাগ দেখালে কাজের চেয়ে অকাজই বেশি হবে৷ এর পরিবর্তে আপনারা সব সময় তাকে উৎসাহিত করতে থাকুন৷ তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলুন৷ তার পড়াশুনার জন্য অনুকুল পরিবেশ গড়ে তুলুন৷ তার সহায়ক হোন৷ তাকে বিশ্রাম নেওয়া বা হাল্কা হওয়ার (relaxation) অনুমতি দিন৷ তার সামনে তার জন্য দোওয়া করুন৷ মাঝে মাঝে চুম্বনও করুন৷
(৭) আবার ফিরে আসি তোমার কর্তব্য নিয়ে৷ বিশেষতঃ পরীক্ষার দিনগুলি নিয়ে৷ পরীক্ষার দিনগুলোতে বেশি চাপ নেবেনা৷ ছয় থেকে সাত ঘন্টা ঘুম সুনিশ্চিত করবে৷ তা নাহলে যা পড়েছো তা ঠিকঠাক নামাতে পারবেনা৷ এভাবে অনেক ভালো ছেলেও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট ভালো করে করবে৷ তারপর শুধু চোখ বুলিয়ে নেওয়া৷ মুখসত্দ গুলো একবার বলে নেওয়া৷ বেশী হড়বড় করার প্রয়োজন নেই৷ তারপর স্নান সেরে ভাত খেয়ে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ো৷
(৮) পরীক্ষার জন্য যা যা নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন সেগুলির একটি ছোট্ট তালিকা তৈরী করে ফেলো৷ পেন, পেন্সিল, রাবার, জ্যামিতি বক্স, এডমিট কার্ড প্রভৃতি৷ বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় একবার সেগুলি সব নেওয়া হয়েছে কিনা তা দেখে নিতে ভুলে যেওনা৷
(৯) তারপর পরীক্ষার হলে পৌঁছে বিশ্রাম করো৷ প্রশ্নপত্র হাতে পেলে ভালো করে পড়তে যথেষ্ট সময় নাও - পাঁচ থেকে দশ মিনিট৷ কেননা, প্রশ্ন নির্বাচন একটি বড় জিনিস৷
(১০) তারপর ধিরস্থির ভাবে মাথা ঠান্ডা করে সাবলীল গতিতে সময়ের দিকে খেয়াল রেখে কলম চালিয়ে যাও৷ লেখার সময় তাড়াহুড়ো করার পরিবর্তে slow but steady wins the race এরকম মানসিকতা রাখাই ভালো৷ কোন বড় প্রশ্নের উত্তর লিখতে গিয়ে কিছু ভুলে গেলে দু'একবার মনে করে লেখার চেষ্টা কর৷ তারপরও যদি মনে না আসে তাহলে ওখানে থমকে দাঁড়িয়ে না থেকে পর্যাপ্ত জায়গা ফাঁকা রেখে এগিয়ে চলো৷
(১১) ওভার রাইটিং করবে না৷ কোন শব্দ বা বাক্য ভুল হয়ে গেলে ঐ শব্দ বা বাক্যটির উপর আলতো করে একটা লাইন টেনে দাও৷ খাতার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা এক বিরাট গুরুত্বপূর্ণ জিনিস৷ কেননা যিনি খাতা দেখবেন তাঁর কাছে তোমার এটা ভালো ধারণা (good impression) হওয়া ভাল নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রবল ভূমিকা রাখে৷
(১২) সবশেষে বলে রাখা ভালো কোন বিষয়ের উপর পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর ঐ বিষয়ের দিকে একটি বারের জন্যও ফিরে তাকানোর প্রয়োজন নেই৷ সমস্ত মনোযোগ পরের দিনের পত্রের দিকে দিতে হবে৷ তাই পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে বাড়ী এসে খাওয়া দাওয়া করে একটু হাল্কা বিনোদন সেরে পরের দিনের পরীক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ো৷
তোমাদের পরীক্ষা ভালো হোক৷ এস.আই.ও. এবং যুবপ্রত্যাশার পক্ষ থেকে এবং আমার নিজের তরফ থেকে তোমাদের জন্য থাকল অশেষ শুভাকাঙ্খা এবং আন্তরিক দোওয়া৷
লেখক: আয়াতুল্লা ফারুক, রিসার্চ স্কলার, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়৷